অনেক সময় দহলিজে খাঁ সাহেবেদের রোজার ব্যবস্থা থাকত অবস্থাপন্নের যৎসামান্য ইফতার দেওয়ার মাধ্যমে। এইভাবেই চলত মাসভর। শেষ রোজায় গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরলে পাড়াতে একসাথে ইফতারের মজলিসে তাদের আনা শহুরে নানা ফলের ডালি খানচায় নিয়ে দোওয়ার মজলিসে সমবেত হত, সব বাড়ির ছোট ছেলেদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মজাই ছিল আলাদা। সেদিনে হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশুনা করার অলিখিত ছুটি মঞ্জুর হতো দু-তিন দিন। ... ...
আমরা কাকের ডাক শুনছি। আমি আর ঝুনু। আর কোনো পাখি নেই, একটাই কাক কেবল কাঁটা কুলগাছের ডালে। ছাদের কার্নিসে বসে দু’জন তাকিয়ে আছি পশ্চিম আকাশের দিকে। গাঁথনি করা দুটো ফ্ল্যাটবাড়ির তরতর উঠে যাওয়ার ফাঁকে খণ্ড আকাশ, কয়েকটা লাল আঁচড় তার গায়ে। এত মন দিয়ে আমরা শেষ কবে কাকের ডাক শুনেছি? কাকটা একবার করে ডাকছে, পরের ডাকের আগে এক দীর্ঘ নিশ্চুপ। সেই স্তব্ধ আমাদের ভেতর অস্থির করছে। আমি একটা খুন করতে যাচ্ছি। ... ...
সে পেছন দিকে আর না তাকিয়ে একা উস্কোখুস্কো হয়ে যবুথবু পা ফেলতে থাকে রেল লাইন ধরে। তার ডানহাতের দিকে রেল পাঁচিল আর কয়েকটি ভাঙাচোরা রেল কোয়ার্টার, কোয়ার্টারগুলো এখন মালিকানাহীন ভূতুড়ে আস্থানা; কোনো দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে, মনে মনে বলে সে “হে আল্লাহতালা! যেসব ডাক্তাররা আমার কালুয়ার চিকিৎসা ঠিক মতো করেনি; তাদের তুমি হেদায়েত দান করো, ক্ষমা করে দিও তাদের।” ... ...
এ তল্লাটে কে না জানে, আজুদের বাড়ির পাশের ঢিবির উত্তর পশ্চিম কোণে চালা পড়ো পড়ো ভিটেয় ঘাপটি মেরে বাস-করা আকালু আসলে এক ভয়ানক গুনিন। যতো গরু ছাগল মরা বাচ্চা বিয়োয়, যতো মেয়েছেলের অসময়ে গর্ভজল খসে, সবের পেছনে ঐ আকালু শালা। ওর নজর পড়লে ফলন্ত লাউ কুমড়ো অব্দি বিলাই কুত্তার শুকনো নাদির মতো খটখটে হয়ে যায়। আবার ভ্যান চালানো ছেড়ে দিয়ে কেউ যদি বিপুল বিষয়আশয়ের মালিক বনে যায় রাতারাতি, ঠিক জানবে তার পেছনে রয়েছে আকালুর দেওয়া মাদুলি আর কবচের কেরামতি। ... ...
আগের বছরের মতন এবছরের ইদ-ও এলো অতিমারীর আবহে। রেডরোডের বর্ণাঢ্য নামাজ বন্ধ রাখতে হল। বন্ধ রাখতে হল উৎসবের যাবতীয় সামাজিকতা, আনন্দের দাওয়াত। এই ইদ তাই সংকল্পের ইদ, যাতে রাজনৈতিক উসকানি, প্রশাসনিক অব্যবস্থার ভ্রুকুটি সরিয়ে আমরা শপথ নিই নতুন করে নিজেদের পাশে নিজেরা দাঁড়ানোর। অতিমারীর ভয় যেন মিলনের ইচ্ছেটুকু কেড়ে না নিতে পারে। দুঃস্থ যেন সেবা পায়, নিরন্ন যেন আহার পায়। আর, আমার উচ্ছ্বাস যেন অন্যের বিপদ ডেকে না আনে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও প্রতিবেশীর দরকারে হাত বাড়িয়ে দেওয়াই হোক এবছরের ইদের কোলাকুলি। ... ...
সবটুকু কোপাই থেকে কুড়িয়ে নোনা শান্তিদেব বুকে বাতি চেপে ধরে দুয়ারে আমাদের পাহারা হয়ে আছে। ... ...
যাগগে, আমি মূল প্রসঙ্গ থেকে আমার বায়োগ্রাফিতে চলে যাচ্ছি। সরি। যে কথা বলছিলাম, অনেকদিন পর আবার সন্ধেবেলা কাজ থেকে ফেরবার সময় পথের ধারে একটি মেয়েকে চাঁদের ওপর পা তুলে বসে থাকতে দেখে অনেকদিন পর আবার মাথা গরম হয়ে গেলো। কিন্তু কাজ, আর বাড়িতে কিছু সমস্যা নিয়ে মাথাটা এতই টেনশনে ছিলো, সেদিন আর বেশিক্ষণ ওখানে দাঁড়ালাম না। বাড়ি চলে এলাম। শুধু মেয়েটির চাঁদের ওপর পা তুলে বসে থাকার দৃশ্যটা মনের ভিতর বাকি রাতটা, পরের সারাটা দিন একটা অস্বস্তি দিয়ে গেলো। দ্বিতীয় দিন ফিরছি। এক দৃশ্য। আজও অস্বস্তি। রাগ কম, অস্বস্তিই বেশি। চেষ্টা করলাম বিষয়টা না ভাবার। এরকম ভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো। ... ...
পুলিশের সাথে বার্তালাপ পছন্দ করে নি সাবকনসাস। সে বলছে, বাসায় চলো…! রিকশা স্টার্ট নিতেই পেছন থেকে পুলিশের হাঁক—ওই ব্যাটারি, সামনে দাঁড়া! আমি আর রিকশাওয়ালা, দুজনেই, ঘাড় ঘুরিয়ে, পুলিশটাকে দেখে, যেন দেখিই নি এমনভাব করে, গতি না বাড়িয়ে না কমিয়ে, চলতে থাকি। সাবকনসাস টোকা দিতে থাকে--বাসায় চলো! কিছু এগিয়ে এলেই একটা মোড়। মোড়ের আগে অন্ধকার। আলোর কাছে পৌঁছানোর আগেই মোটর সাইকেল। পুলিশ। ‘ওই ব্যাটা, তোকে না দাঁড়াইতে কইলাম!’ রিক্সাওয়ালা দাঁড়িয়ে যায়। আমি নেমে যাই। ‘হাতে কী?’ ‘কাবাব।' ‘আর?’ ‘মদ।' ‘কী মদ?’ ‘কেরু।' ‘লাল না সাদা?’ ‘লাল।' ‘আপনি তো ভালো মানুষ। কোনো যাতনা ছাড়াই সব বইলা দিলেন। ... ...
যা হচ্ছে তা ভালোর জন্যই হচ্ছে কথাটা বিশ্বাস করব বলে আপাততঃ শরীর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া মাথাটা এমনকি জোড়া লাগাবার চেষ্টাও করছি না বরং ব্যথা কমানোর ওষুধ নিয়ে অপেক্ষা করে আছি কতক্ষণে পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফেলব যা হয়েছে তা ভালোই হয়েছে... ... ...